ভোলা জেলার সর্ব দক্ষিণের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুর এলাকার মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলে ঢেউয়ের তোড়ে পলি জমে জেগে উঠা প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ বালির সৈকত। এর পাশে মাথা উঁচু করে থাকা সারি সারি কেওড়া গাছের সবুজের সমারহের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। বনে হরিণের ছুটে চলা, সৈকতে অতিথি পাখির উড়ে বেড়ানো যে কাউকে মুগ্ধ করবে। প্রকৃতির এমন অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে প্রতিদিন ভ্রমণ পিপাসুরা ভিড় করছে। স্থানীয়রা যার নাম দিয়েছে “দখিনা হাওয়া, সী-বিচ”। এ বিচকে ঘিরেই মনপুরা হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন ¯পট।বঙ্গোপসাগরের কোলঘষে জেগে উঠা দ্বীপকন্যার নীল আকাশ আর সাগরের ঢেউয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এ বালির সৈকত দেখে মনে হবে কক্সবাজার অথবা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। যেখানে একই সঙ্গে দেখা মিলবে নীল আকাশের জলরাশি, ম্যানগ্রোভ বন, হরিণ, নানা প্রজাতির অতিথি পাখি আর সূর্য উদয় এবং সূর্যাস্তের অপরুপ দৃশ্য। রাতের অন্ধকারে “দখিনা হাওয়া, সী-বিচ” ভিন্ন রূপ ধারণ করে। এসময় তাবুতে রাত কাটানো, সাথে ক্যা¤প ফায়ার, বন্ধু-বান্ধব আতœীয়-স্বজন নিয়ে হই হুল্লোর আর বারবিকিউ পার্টির মজাই আলাদা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সাগর মোহনার মনপুরা দ্বীপের খ্যাতি রয়েছে অনেক আগে থেকেই। সেই সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সাগরের ঢেউয়ে গা ভাসানোর সুযোগ।এ বছর শীত মৌসুমের শুরু থেকেই এ পর্যটন ¯পটে মানুষের ঢল নামে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিচারক, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা জজ, ইউএনওসহ সরকারের নানা পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সৈকতটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলবেঁধে, অনেকে আবার লঞ্চ রিজার্ভ করে এ সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন প্রতিনিয়ত। পিকনিক ¯েপাট হিসেবেও বিভিন্ন সংগঠন এ বিচটিকে বেছে নিয়েছে। সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপশি পর্যটকদের বিশ্রাম নেয়ার জন্য অর্ধশতাধিক ছাতা ও বেঞ্চ বসানো হয়েছে। আছে ছনের তৈরি একাধিক গোলঘর, বৈঠকখানা, দোলনা। পাশাপশি পর্যটকদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা করা হয়েছে লাইফ জ্যাকেটের।বিচে ঘুরতে আসা পর্যটক জাফর আহমেদ, সজিব হোসেন ও রবিন ঘোষ জানান, ভ্রমণের জন্য জায়গাটা খুবই চমৎকার। পরিবার নিয়ে ভালো সময় কাটানো যায়। “দখিনা হাওয়া সী-বিচ” সমুদ্র সৈকত হিসেবে এক অন্য রকম যায়গা। কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সৈকত থেকেও আলাদা কিছু। তাই মনপুরাকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা এখন সময়ের দাবি বলে জানান ঘুরতে আসা এসব পর্যটক।
স্থানীয় সাংবাদকর্মী আব্দুল্লাহ জুয়েল বলেন, এখানে প্রবেশের কোন ফি দিতে হয়না। দিতে হয়না বেঞ্চে বসার কোন চার্য। বৃহ¯পতি, শুক্র ও শনিবার বিচটিতে পর্যটকদের বেশি ভিড় থাকে। কারণ ছুটি থাকায় এসময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক আসে এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে।দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান অলি উল্লা কাজল ও তার সহধর্মিণী সাথী কাজলের উদ্যোগ সী-বিচটির শোভা বর্ধনের কাজ শুরু হয়। কয়েক মাস আগেই এ সী-বিচের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে পর্যটকদের আকর্ষণীয় করতে শুরু হয় প্রচার-প্রচারণা। এছাড়াও ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার জন্য ২০ সদস্যের স্থানীয় একটি তরুণ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অলি উল্লাহ কাজল বলেন, ২ বছর আগে এখানে বিচটি জেগে উঠে। গত রোজার ঈদের পর থেকেই এ দ্বীপটির সৌন্দর্য প্রকাশ পেতে থাকে। পরে আমি উদ্যোগ নিয়ে এর সৌন্দর্য বিস্তারে কাজ করি। বর্তমানে এটি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এখানে একটি ওয়াস রুম স্থাপনের কাজ চলছে।
মনপুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেলিনা আকতার চৌধুরী জানান, সী-বিচের শোভা বর্ধনের জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে “দখিনা হাওয়া সী-বিচকে” বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম মিয়া জানান, জেলা প্রশাসন থেকে গত সেপ্টেম্বরে ভোলার উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। সেখানে মনপুরা উপজেলাকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া ঘুরতে আসা পর্যটকদের হয়রানি থেকে মুক্ত রাখার জন্য পুলিশ প্রশাসনসহ জন প্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে মনপুরায় পর্যটনের অপার সম্ভবনা রয়েছে।
কিভাবে যাবেন : ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকেল ৫ টায় এমভি ফারহান ও সাড়ে ৫ টায় এফবি তাসরিফ লঞ্চে ডেকে ৩৫০ টাকা ও কেবিনে ১২০০ টাকায় সরাসরি মনপুরায় আসতে পারেন। এছাড়াও বরিশাল থেকে লঞ্চযোগে ভোলার ভেদুরিয়া হয়ে বাসযোগে তজুমুদ্দিন সীট্রাক ঘাট। সেখান থেকে লঞ্চ করে সন্ধ্যায় মনপুরায়।