প্রিয় ভিজিটর আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন। অনেকেই অনুরোধ জানিয়েছেন আমরা যেন গুরুত্বপূর্ণ বাংলা রচনা গুরো আপলোড দেই। তাই আপনাদের জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনাটি তুলে ধরলাম। আশা আপনারা উপকৃত হবেন।
আজকে ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। আজকের বিষয়টি হলো রচনা নিয়ে । যা বাংলা দ্বিতীয় পত্রের অংশ। কথা বলবো অনেক important একটি রচনা নিয়ে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা
ভূমিকা :
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাে
একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি....."
রক্তাক্ত একুশ আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ২০০০ সাল থেকে এ দিনটি সারাবিশ্ব একসাথে পালিত হবার সিদ্ধান্ত ইউনেস্কো কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। বাঙালি জাতির অহংকার মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আজ সারাবিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাযী মানুষের অহংকারে পরিণত হয়েছে। মাতৃভাষার জন্য বাঙালি জাতির আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। ইউনেস্কোর মাধ্যমে একুশে ফেব্রুয়ারি দিবসটি স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলা ভাষা আরও ভাস্বর হয়ে উঠেছে। যা বাঙালির অতিগর্বের বিষয়।
মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি : ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত মাতৃভাষা দিবসের যে বৈশিষ্ট্য তাকে উজ্জীবিত করার জন্য মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পূর্ব থেকেই বাঙালিকে বাংলা ভাষার জন্য লড়াইয়ে নামতে হয়েছিল উর্দু ভাষার প্রতিপক্ষ হিসেবে। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.গিয়াসউদ্দিন আহমদ.প্রথম বাংলা ভাষাকে উর্দু ভাষার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, "ভারতে যেমন হিন্দি ভাষা হতে যাচ্ছে রাষ্ট্রভাষা তেমনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হওয়া উচিত ।" এর সাথে সাথেই প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ দৈনিক আজাদ' পত্রিকার মাধ্যমে বলেছিলেন, "পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া আবশ্যক ।" এরপর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তানের শাসক গােষ্ঠী এ ব্যাপারে খুব তৎপর হয়ে ওঠে। তাদের বক্তব্য- উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তখন বাঙালি জনগােষ্ঠী এটাকে বরদাস্ত করতে পারল না। তারা বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জোরালাে বক্তব্য ও যুক্তি তুলে ধরতে শুরু করে। তবে এর বিপক্ষে জোরালাে প্রতিরােধ গড়ে উঠায় ১৯৪৭ সালে ঢাকার রাজপথে তৎকালীন ছাত্রসমাজ তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ১৯৪৮ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে বাঙালি নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সংসদে বাংলা ভাষা বিষয়ের একটি সংশােধনী প্রস্তাব এনে বলেছিলেন,- "উর্দু, ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকেও গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে ব্যবহার করার সুযােগ রাখা হবে।" এর পূর্বে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তমদ্দুন মজলিসের অফিসে তৎকালীন ছাত্র নেতৃবৃন্দ, অধ্যাপক এবং বুদ্ধিজীবীদের এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ফজলুল হক হলে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের এক সভায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সর্বদলীয় পরিষদ গঠিত হয়। এর আহবায়ক মনােনীত হন সামসুল আলম। এভাবেই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি ধাীরে ধীরে প্রবল ভাষা আন্দোলনে রূপ লাভ করে। ১১ মার্চ পালিত হয় দেশব্যাপী সর্বাত্মক ধর্মঘট। সেদিন শেখ মুজিব, শামসুল হক, অলি আহমদসহ অনেকেই গ্রেফতার হন।
জিন্নাহর ঘােষণা : ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ অপরাহ্নে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের বিশাল সমাবেশে এবং সন্ধ্যায় কার্জন হলের সভায় পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘােষণা করেন। দুটি সভাতেই তীব্র প্রতিবাদ হয় এবং এরপর প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সমগ্র পূর্ব বাংলার মানুষ। ছাত্র, শিক্ষক, রাজনীতিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ বাংলার শিক্ষিত সচেতন জনতা ভাষার দাবিতে ক্ষোভে-বিক্ষোভে, আন্দোলনে-সংগ্রামে সারা বাংলা এক অভূতপূর্ব জাগরণ সৃষ্টি করে। ক্রমে এ দাবি রাজনৈতিক আন্দোলনের ইস্যু হয়ে ওঠে। ফলে শুরু হয় শাসক গােষ্ঠীর দমনপীড়ন। রাজবন্দিতে ভরে ওঠে জেলখানা। ছাত্র জনতার আন্দোলনও হয়ে উঠে আরও বেগবান, আরও তীব্র।৫২'র একুশে ফেব্রুয়ারি : ১৯৫২ সালের শুরুতেই বাংলা ভাষার আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। এমনি উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ৫২ সালের ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি পতাকা দিবস এবং ২১ শে ফেব্রুয়ারি 'রাষ্ট্রভাষা' দিবস পালন ও সাধারণ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ নেতৃবৃন্দ। ঐ দিন পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের বাজেট অধিবেশন আহ্বান করে সরকার। আর ভাষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন ঐ দিন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ফলে সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় হাজার হাজার ছাত্র জনতার সমাবেশ ঘটে। ভাষা সৈনিক গাজীউল হকের সভাপতিত্বে ঐ সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে কোনা মূল্যে ১৪৪ ধারা ভাঙতে হবে এবং ১০ জন করে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে গণপরিষদ ভবনের দিকে এগিয়ে যাবে। শুরু হলাে মিছিল। আর পুলিশও শুরু করল লাঠি চার্জ, কাঁদানে গযাস নিক্ষেপ এবং গুলি । রক্তে রঞ্জিত হলাে ঢাকার রাজপথ। নিহত হলাে ঢাকা বিশ্বদ্যারয়ের ছাত্র আবুল বরকত সহ রফিক, জব্বার, সালাম এবং নাম না জানা আরও অনেকে। আহতের সংখ্যা অসংখ্য । আর এ রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই আমরা ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জন করি স্বাধীনতা।
একুশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও তাৎপর্য : একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আর শুধু আমাদের মাতৃভাষা দিবস নয়। প্রতি বছর 'একুশে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) তার সাধারণ পরিষদের ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশের সমর্থন দিয়ে সর্বসম্মতভাবে '২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় । ইউনেস্কোর প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্যে বাংলাদেশের অনন্য ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং ১৯৫২ সালের এই দিনের শহিদদের স্মৃতিকে স্বরণীয় করে রাখতে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতিবছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর ১৮৮টি সদস্য দেশ এবং ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হবে।ইউনেস্কোর এ ঘােষণার মধ্য দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলা ভাষা সম্মানিত হলাে এবং একবিংশ শতাব্দীর তথা ২০০০ সালের ২১ শেফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বব্যাপী প্রথম পালিত হলাে আশ্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আজ তা চলমান।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিশ শতকের শেষ প্রান্তে এসে জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কোার মাতৃভাষাগুলাের অধিকার এবং একে মর্যাদাপূর্ণভাবে টিকিয়ে রাখতে যে অনন্য সাধারণ সংগ্রামের সূচনা করল, তা সারা বিশ্বের ভাষা প্রবাহে অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি সারা দুনিয়ায় আমাদের রক্তে রাঙানাে ভাষা গাঁথাই যে শুধু উচ্চারিত হবে তা নয়। একই সাথে এ দিনটি বিশ্বের বৃহৎ ভাষাগুলাের পাশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নিপীড়িত অবহেলিত ভাষাগুলােও সঙ্গবন্ধভাবে বেঁচে থাকবে এবং বিরাট অনুপ্রেরণা খুঁজে পাবে। আজ তাই বাঙালি জাতির ও তার মাতৃভাষার প্রতি জাতীয় দায়িত্ববােধ শতগুণে বেড়ে গেল ।
আপনার প্রয়োজনীয় কিছু লাগলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন এস মিডিয়ার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ