হাতিয়া দ্বীপ সম্পকে কিছু তথ্য
হাতিয়া উপজেলা নোয়াখালী জেলার বেশ কিছু উপকূলীয় দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এর এলাকার পরিমাণ ২১০০ বর্গ কিলোমিটার। এর উত্তরে সুবর্ণচর উপজেলা ও উত্তর পশ্চিমে রামগতি উপজেলা, দক্ষিণে ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর, এবং পশ্চিমে মনপুরা উপজেলা অবস্থিত। হাতিয়া উপজেলা ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ । হাতিয়া শহর এলাকা ৩ টি মৌজা নিয়ে গঠিত। এর মোট এলাকা ২৫.৭২ বর্গ কিলোমিটার। প্রমত্তা মেঘনা আর বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশির প্রচণ্ড দাপটের মুখে হাতিয়ায় প্রকৃতির ভাঙা-গড়ার কারণে এক থেকে দেড়শ’ বছরের পুরনো কোনো নিদর্শন অবশিষ্ট নেই। দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি অনেক গবেষক হাতিয়ার ওপর গবেষণা করেছেন। তাদের মধ্যে সুরেশ চন্দ্র দত্ত কিছু যুক্তি দিয়ে হাতিয়ার বয়স অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন। দক্ষিণবঙ্গের ভূ-ভাগ সৃষ্টির রহস্য নিয়ে তার গবেষণায় তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রতি ১৩৬ থেকে ১৪০ বছর সময়ের মধ্যে এক মাইল স্থলভাগ সৃষ্টি হয় হাতিয়ায়। তার এ তথ্য আমলে নিয়ে হাতিয়ার বর্তমান আয়তনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে হাতিয়ার বয়স সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার বছর বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হাতিয়ার চৌহদ্দি নিরূপণ করলে দেখা যায়, হাতিয়ার উত্তরে সুধারাম, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে সন্দ্বীপ এবং পশ্চিমে মনপুরা ও তজুমদ্দিন উপজেলা। এক সময় সন্দ্বীপের সঙ্গে হাতিয়ার দূরত্ব ছিল খুবই কম। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই দূরত্ব এখন ৬০ মাইল ছাড়িয়েছে। ক্রমাগত ভাঙনই এ দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। হাতিয়ার ভাঙা-গড়ার খেলা চতুর্মুখী দোলায় দোদুল্যমান। উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম দিক দিয়ে ভাঙছে। আবার দক্ষিণে গড়ছে, পাশাপাশি আবার মূল ভূখণ্ডকে কেন্দ্র করে আশপাশে ছোট-বড় নানান ধরনের চর জেগে উঠছে। ওয়েব স্টার নামের একটি সংস্থার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৮৯০ সাল থেকে হাতিয়ার আদি ভূখণ্ডের উত্তর ভাগের ভাঙন শুরু হয়। বিরাট আয়তনের জমি নদী ও সাগরের ভাঙনে বিলুপ্ত হলেও একই সময় দ্বীপের উত্তর দিকে হাতিয়ার আয়তন ভাঙনের প্রায় ২ থেকে ৫ গুণ হারে বাড়তে শুরু করে। সেই সময় এ অঞ্চলের জেগে ওঠা চরের যে হিসাব পাওয়া যায় তা হলো : ফেনী নদীর মুখে ৫টি, হাতিয়া দ্বীপের সম্প্রসারণ ১৮টি, হাতিয়া চ্যানেলে ৫টি, মেঘনার বুকে ৩টি ও ডাকাতিয়া নদীর মুখে ৩৫টি চর সৃষ্টির প্রক্রিয়া হাতিয়ার মোট আয়তনকে পরিবৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে। ১২০ বছরের ব্যবধানে হিসাব-নিকাশে ঢের পরিবর্তন এসেছে। অনেক চর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, কিছু কিছু আবার ভাঙনের কবলে পড়ে হারিয়ে গেছে। ক্রমাগত ভাঙনের কারণে সঠিক আয়তন নির্ধারণ করা কঠিন হলেও উপজেলা পরিষদের হিসাব মতে হাতিয়ার বর্তমান আয়তন ২১শ’ বর্গকিলোমিটার বলে উল্লেখ আছে। মধ্যযুগের ইতিহাস হাতিয়ার বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন, সাবেক উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমীন রচিত ‘তিলোত্তমা হাতিয়া : ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ বই ও দ্বীপের প্রবীণদের কাছ থেকে হাতিয়ার ইতিহাস সম্পর্কে জানা গেছে, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ শতাব্দীর দিকে বঙ্গোপসাগর আর মেঘনার মোহনায় গড়ে ওঠা সবুজে ঘেরা দ্বীপটি মানুষের নজরে আসে। কিংবদন্তি রয়েছে, পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে বার আউলিয়া নামে খ্যাত বারজন আউলিয়া মাছের পিঠে সওয়ার হয়ে বাগদাদ থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে হাতিয়ায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন।বিশ্রামকালে সন্দ্বীপ-হাতিয়ার অনেক মানুষ তাদের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। হজরত সুলতান ইব্রাহীম বলখি মাহীসাওয়ারও মাছের পিঠে চড়ে হাতিয়ায় এসেছিলেন। বিখ্যাত সাধক বায়েজিদ বোস্তামী এবং হজরত শাহ আলী বোগদাদি হাতিয়ায় কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। এর পর থেকে হাতিয়ায় প্রচুর আরব সাধক এসেছিলেন। সর্বশেষ একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির বঙ্গ বিজয়ের চারশ’ বছর আগে ৭ম শতাব্দীতে কিছু আরব বণিক ধর্ম প্রচারের জন্য সমুদ্রপথে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় মনোরম এই দ্বীপটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে দ্বীপে কিছুকাল অবস্থান করেন। এসব আরব বণিক ও সাধক দ্বীপে বসবাসরত কিরাত সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষদের মাঝে ইসলাম প্রচার করেন। ইসলাম প্রচার ইতিহাসে বাংলাদেশে ইসলামের প্রবেশদ্বার হিসেবে চট্টগ্রামকে ধরা হলেও হাতিয়াতেই ইসলামের সূত্রপাত হয় বলে বিশ্বাস করেন দ্বীপের মানুষেরা। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে এখানে একটি বৃহত্তম জামে মসজিদ গড়ে ওঠে। এটিই ছিল হাতিয়ার ঐতিহাসিক প্রথম জামে মসজিদ। নির্মাণের প্রায় ৮০০ বছর পর ১৭০২ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৫৮ সালে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মজিদের নকশায় পুরনো সেই মসজিদের আদলে মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন হিসেবে এখানে আরেকটি মসজিদ গড়ে তোলা হয়। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত মসজিদটি অক্ষত ছিল।
হাতিয়া দ্বীপ কোথায়
হাতিয়া দ্বীপ হচ্ছে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর এলাকার উত্তর দিকে অবস্থিত মেঘনা নদীর মোহনায় একটি দ্বীপ। এই দ্বীপটি নোয়াখালী জেলায় পড়েছে। এই দ্বীপের আয়তন ৩৭১ কিলোমিটার ।
ঢাকা থেকে হাতিয়া দীপে যেভাবে যাওয়া যায়
* সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে
*ট্রেন বা বাসে নোয়াখালী হয়ে
বাসে করে গেলে প্রথমে হিমাচল, একুশে অথবা ইকোনো পরিবহনের বাসে যেতে হবে নোয়াখালীর সোনাপুরে, প্রতিদিন মোটামুটি সকাল দুপুর ও সন্ধ্যায় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর এর দিকে বাস ছেড়ে যায়, আবার ধানমন্ডি জিগাতলা কাউন্টার থেকে ফকিরাপুল হয়ে একুশে পরিবহনের বাস ছাড়ে রাত ১০.২০ মিনিট।
আপনি ট্রেনে যেতে পারেন নোয়াখালীর মাইজদি পর্যন্ত। ঢাকা কমলাপুর থেকে বৃহস্পতি বার বাদে, প্রতিদিন বিকাল ৪.২০ মিনিট এ ৭১২ নং আন্তঃনগর উপকুল এক্সপ্রেস নোয়াখালী এর দিকে ছেড়ে যায়, মাইজদি পৌঁছে রাত ১০.২২ মিনিট। ভাড়া - স্নিগ্ধা - ৫০৩ টাকা, প্রথম চেয়ার - ৩৫৫ টাকা, শোভন চেয়ার - ২৭০ টাকা, শোভন - ২৩০ টাকা।
নোয়াখালীর সোনাপুর / মাইজদি থেকে লোকাল বাস বা সিএনজিতে করে, সি এন জি সারাদিন চলে ভাড়া জনপ্রতি ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা, নামতে হবে বয়ার চর - চেয়ারম্যান ঘাটে।
চেয়ারম্যান ঘাট থেকে সি-ট্রাক, ট্রলার ও স্পীড বোট ছাড়ে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে, সি-ট্রাক ছাড়ে প্রতিদিন সকাল ৮ টায় নম্বর-০১৭৫৬৮৪৬১০৬ ভাড়া জনপ্রতি - ৮০ টাকা, ট্রলার - ১২০ - ১৫০ টাকা ভাড়া প্রতিজন ও স্পীড বোট জনপ্রতি ভাড়া - ৪০০-৫০০ টাকা। যাত্রীদেরকে নামাবে হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে, নলচিরা থেকে বেবিটেক্সিতে (৬০০-৭০০) করে যেতে হবে মোক্তারিয়া ঘাটে, সরাসরি নলচিরা ঘাট থেকে মোটর সাইকেল রিজার্ভ করে মোক্তারিয়া ঘাট এ যাওয়া যায় ভাড়া দুই জন ৩৫০ - ৪৫০ টাকা, দর দাম করে নিবেন। সেখান থেকে ট্রলারে ১৫ মিনিট লাগবে নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ঘাটে ভাড়া জনপ্রতি - ১০ টাকা। এরপর আপনি যদি নামার বাজার থাকেন তবে ভ্যান/রিক্সা/মোটর সাইকেল এ যেতে হবে। ভাড়া ৮০-১০০ টাকা মটরসাইকেল দুইজন। বন্দর টিলায় ও থাকতে পারেন আপনি তবে নামার বাজার থাকা বেস্ট। নলচিরা থেকে নোয়াখালী চেয়ারম্যান ঘাট যাওয়ার ফিরতি সী ট্রাক ছাড়ে সকাল ১১ টায়।
লঞ্চে গেলে ঢাকার সদরঘাট থেকে যেতে হবে - ঢাকা থেকে হাতিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রতিদিন ২ টা লঞ্চ বরাদ্দ রয়েছে - ৪ টা লঞ্চ রোটেশন পদ্ধতিতে ডেইলি ২ টা করে ছেড়ে যায়, প্রতিদিন বিকাল ৫.৩০ মিনিট ও সন্ধ্যা ৬ .০০ মিনিট এ ছেড়ে যায় । আর হাতিয়া এর লঞ্চ ১ মিনিট ও লেট করে না, বি কেয়ার ফুল। আমি একবার মিস করেছিলাম।
লঞ্চ গুলো হলো , এম ভি ফারহান ৩ ও ৪ এবং এম ভি তাসরিফ ১ ও ২ । এম. ভি টিপু
হাতিয়ার দর্শনীয় স্থান
কাজির বাজার।
কমলার দিঘী।
রহমত বাজার সি-বীচ
তমরুদ্দি পাথর ঘাট।
সূর্যমূখী সি বীচ।
দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা পার্ক
সর্ণদ্বীপ সেনানিবাস।
আলাদি গ্রাম।
টাংকির ঘাট।
ভাসানচর
দমার চর
কাটাখালী ম্যানগ্রোভ
কাটাখালী খাল
আমতলী ফরেষ্ট এরিয়া, জাহাজমারা
মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা
মোক্তারিয়া ঘাট
নিমতলী সমুদ্র সৈকত,জাহাজমারা
দানারদোল সি-বীচ
নলচিরা ঘাট
বাংলা বাজার, চরঈশ্বর
সেলিম মার্কেট, বুড়িরচর
কালিরচর সি-বীচ
কাদেরিয়া সুইচ
চরচেংগা সী-বিচ
আরটিক্যালটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে
শেয়ার করে পাশে থাকুন